File Type: jpg
Name: ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর : কর্মবীর এক মনীষার চলে যাওয়া
Uploader: admin
Download count: 3
Size: 27.41 KB
Description: ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদিস
বিভাগের অধ্যাপক ড. খোন্দকার আ ন
ম আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সকালে (১১
মে ২০১৬) মর্মান্তিক এক সড়ক
দুর্ঘটনায় ইন্তেকাল করেছেন।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইজি
রাজিউন।
ড. জাহাঙ্গীর ১৯৬১ সালের ১
ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহের ধোপাঘাট
গোবিন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা খোন্দকার আনওয়ারুজ্জামান ও
মায়ের নাম বেগম লুৎফুন্নাহার।
তিনি ঢাকা সরকারি আলিয়া
মাদ্রাসা থেকে ১৯৭৩ সালে দাখিল,
১৯৭৫ সালে আলিম এবং ১৯৭৭ সালে
ফাজিল ও ১৯৭৯ সালে হাদিস বিভাগ
থেকে কামিল পাস করেন। এরপর
তিনি সৌদি আরবের রিয়াদের ইমাম
মুহাম্মাদ বিন সাঊদ ইসলামি
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৬ সালে
অনার্স, ১৯৯২ সালে মাস্টার্স ও ১৯৯৮
সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
রিয়াদের অধ্যয়নবালে তিনি বর্তমান
সৌদি বাদশা ও তৎকালীন রিয়াদের
গভর্নর সালমানের হাত থেকে পর পর
দু’বার সেরা ছাত্রের পুরস্কার গ্রহণ
করেন। সৌদিতে তিনি শায়খ বিন
বায, বিন উসায়মিন, আল জিবরিন ও
আল ফাউজানসহ বিশ্ববরেণ্য
স্কলারদের সান্নিধ্যে থেকে ইসলাম
প্রচারে বিশেষ দীক্ষা গ্রহণ করেন।
রিয়াদে অধ্যয়নকালে তিনি উত্তর
রিয়াদ ইসলামি সেন্টারে দাঈ ও
অনুবাদক হিসেবে প্রায় তিন বছর
কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও তিনি
ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ
থেকে বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর
প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সৌদি
আরবে শিক্ষা শেষে লোভনীয়
চাকরির প্রস্তাব উপেক্ষা করে
ইসলাম প্রচার ও সমাজ সংস্কারের
উদ্দেশ্যে ফিরে আসেন
বাংলাদেশে।
দেশে এসে ইসলাম প্রচারসহ নানা
সামাজিক কর্মকাণ্ডে আত্মনিয়োগ
করেন। পেশায় তিনি ছিলেন একজন
শিক্ষক। ১৯৯৮ সালে কুষ্টিয়া
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আল
হাদিস অ্যান্ড ইসলামি স্টাডিজ
বিভাগের লেকচারার হিসেবে
যোগদান করেন। ২০০৯ সালে তিনি
একই বিভাগে প্রফেসর পদে উন্নীত
হন। এছাড়াও তিনি ঢাকার
ঐতিহ্যবাহী দারুস সালাম
মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন শায়খুল
হাদিস হিসেবে সহিহ বোখারির
ক্লাস নিতেন। তিনি ওয়াজ
মাহফিলের অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন
আলোচক ছিলেন। বাংলাদেশের
প্রত্যন্ত অঞ্চলে সফর করে তিনি
মানুষকে শোনাতেন শাশ্বত
ইসলামের বিশুদ্ধ বাণী।
বাংলা ইংরেজি ও আরবি ভাষায়
সমাজ সংস্কার, গবেষণা ও
শিক্ষামূলক প্রায় পঞ্চাশের অধিক
গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। তার
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- এহয়াউস
সুনান, তরিকে বেলায়েত, হাদিসের
নামে জালিয়াতি, ইসলামের নামে
জঙ্গীবাদ ইত্যাদি।
মরহুম আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর
ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত সদালাপী,
বিনয়ী, উম্মাহর জন্য দরদী, মুখলিস,
পরমত সম্মানকারী, যুগসচেতন,
ভারসাম্যপূর্ণ, উম্মাহর ঐক্য ভাবনায়
বিভোর, প্রাজ্ঞ ও পণ্ডিত হিসেবে
সব মহলে সমাদৃত ছিলেন।
ফুরফুরা শরীফের পীর আবদুল কাহহার
সিদ্দীকির মেয়ে ফাতেমার সঙ্গে
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের
সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে
রয়েছে।
দেশজুড়ে তার হাজার হাজার
গুণগ্রাহী ও ভক্ত রয়েছেন। মহান
রবের নিকট দোয়া করি-তিনি যেন এই
মহান কর্মবীর ও আমাদের চোখে মহৎ
ব্যক্তিকে আপন মাগফিরাত ও
রহমতের চাদরে ঢেকে নেন।
– আহমাদুল্লাহ
(প্রিচার অ্যান্ড ট্রান্সলেটর, পশ্চিম
দাম্মাম ইসলামি সেন্টার, সৌদি
আরব)।
আদাবরের একটা মাহফিলে
গিয়েছিলাম শায়খ খন্দকার
আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের বক্তব্য শুনব
বলে। শায়খ যখন এলেন তখন অন্য
একজন আলিমের বক্তৃতা চলছে।
শায়খকে সবাই অনুরোধ করল মঞ্চে
বসতে, তিনি জিহবা কেটে আমাদের
সারিতে এসে বসলেন — আমাদের
পাশে। তারপর মন দিয়ে কথা শুনতে
লাগলেন।
যে তিনজন শায়খের মুখে সবসময়
হাসি দেখেছি – ড. মানজুরে এলাহী,
ড. জাকারিয়া এবং ড. জাহাঙ্গীর।
কেমন করে পারেন জানি না। কথা
বলতে বলতে ঘেমে যাচ্ছেন — পকেট
থেকে রুমাল বের করে মুছছেন,
ক্লান্তি নেই, মুখের হাসির বিরাম
নেই। কীভাবে পারতেন?
ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ বইটা
থেকে শায়খের কাছে শেখা শুরু।
এহইয়াউস সুনান বাংলায় আমার পড়া
ইসলামি বইগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বিদআত কী একটা মাহফিলে এত সুন্দর
করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বলার মতো
নয়। কিছু কিছু মানুষকে আল্লাহ
জ্ঞানের ভার দেন, সহজে কথা বলার
সামর্থ্য দেন।
বেশ কয়েকদিন আগে সালাফী,
আহলে হাদিস, কওমি – সব ঘরানার
আলিমদের নিয়ে তিনি একটি একতার
উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আহলে
হাদিসদের মাহফিলে তিনি আমিন
জোরে বলতেই হবে ফতোয়া দিয়ে
তালি কুড়াতেন না। হানাফিদের
মাহফিলে গিয়ে তিনি আহলে
হাদিসদের গালি দিতেন না।
উভয়পক্ষকেই তিনি ধৈর্য্যের কথা
বলতেন। সুন্নাহর ভিন্নতার কথা
বলতেন। সহিষ্ণুতার কথা বলতেন।
অনেকের মতে তিনি আপোস করতেন–
মিথ্যা কথা। তাঁর মতো নিজ হাতে
মাজার ভাঙা আলিম বাংলাদেশে
কম-ই আছেন।
বলতেন, এক গ্লাস পানিতে কিছুটা
মানব বিষ্ঠা আর এক পুকুর পানিতে
কিছুটা মানব বিষ্ঠা এক নয়। শুধু একটা
বিদআতের কারণে এক পুকুর আমল বাদ
করে দেবেন না।
জানি না শেষ কবে এতটা কেঁদেছি।
ফেবু খুলে একেকটা লেখা পড়ে
কান্না বেড়েই গেছে। কেন কেঁদেছি?
সম্ভবত শায়খ আব্দুল্লাহ
জাহাঙ্গীরকে আল্লাহ
ভালোবাসতেন। তিনি জিবরিল
আমীনকে ডেকে জানিয়ে
দিয়েছিলেন সে ভালোবাসার কথা।
জিবরিল জানিয়েছিলেন আসমানের
মালাইকাদের। সেখান থেকে
দুনিয়ার মালাইকারা
ভালোবেসেছিলেন তাকে। সেই
ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়েছে দুনিয়ার
মানুষদের মধ্যে। সারা দুনিয়ায়
যেখানে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম
আছে সেখানেই তাকে ভালোবাসার
মানুষ আছে।
চোখের পানি আমি একা ফেলেনি।
আরো অনেক ফেলেছে।
যে কারণে ফেলেছে তার নাম
আল্লাহর ভালোবাসা। আমরা আজকে
আবার অনুভব করেছি আল্লাহর
ভালোবাসা কাকে বলে।
আমি শায়খের জন্য সেই দুআ করছি যা
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম করেছিলেন,
হে আল্লাহ! শায়খকে ক্ষমা করুন, দয়া
করুন, তাকে শান্তিতে রাখুন।
তাকে মাফ করুন, তার অবস্থানকে
মর্যাদা দান করুন।
তার কবরকে প্রশস্ত করুন, পানি বরফ
এবং শিলাবৃষ্টি দ্বারা তাকে ধৌত
করুন।
অপরাধ থেকে তাকে পবিত্র করুন–
যেমন সাদা কাপড়কে ময়লামুক্ত করা
হয়। হে আল্লাহ! তাকে দুনিয়ার
বাসভবন হতে উত্তম বাসভবন দান করুন,
তা্র পরিবার হতে উত্তম পরিবার,
তার স্ত্রী হতে উত্তম স্ত্রী দান করুন,
তাকে জান্নাতে দাখিল করুন এবং
রক্ষা করুন কবরের আযাব হতে,
জাহান্নামের আযাব হতে। [সহীহ
মুসলিম ২১০৩, ইফা]
– শরীফ আবু হায়াত অপু
ছেলেটা উঁকিঝুঁকি মারছিল, হাতে
একটা ব্যাগ। মনে হচ্ছিল একটু সঙ্কোচ
বোধ করছে। কিছু হয়তো বলতে চাইছে।
আবার মানুষজন দেখে সামনেও
আসতে চাইছেনা। স্যারের সাথে
কথা বলতে চাইছিল। কে যেন নিষেধ
করে বিদায় করে দিচ্ছিল। হঠাৎ স্যার
দেখে বললেন “আসতে দিন, হয়তো
কোনো জরুরী কাজে এসেছে”
স্যারের জন্য কোথাথেকে যেন আম
নিয়ে এসেছে ছেলেটা। ওটাই সে
দিতে চাচ্ছিল নিজে। স্যার খুব খুশি
মনে নিলেন উপহারটা। যদিও ওনার
ডায়াবেটিস ছিল, তারপরও খুব তৃপ্তি
করে খেলেন। সাধারণ একজন মানুষ কত
সহজে চলে এলেন এতো বড় মাপের
একজন ‘আলিমের সান্নিধ্যে !
আরেকবার পরিবারের কিছু সদস্যকে
নিয়ে গিয়েছিলাম ওনার
প্রোগ্রামে, সদস্যদের মধ্যে একজন
ছিলেন যিনি কোনো আলেমের
কাছে ধারে আসেননি বহু বছর।
হুজুরদের উনি একরকম জাহেলই মনে
করেন। ওনাকেও দেখেছিলাম সেদিন
প্রোগ্রামের মাঝে স্যারের কথা
শুনে মিটিমিটি হাঁসতে। পীরকে
বায়াত দেওয়া এক বন্ধুর বাবাকেও
দেখেছি মসজিদে ওনার সামনে বসে
শিশুর মত মুগ্ধ হয়ে ওনার কথা শুনতে।
মানুষটার কথাতে আল্লাহ্ কিছু একটা
দিয়েছিলেন যে তা যে-ই শুনেছে মুগ্ধ
হয়েছে। বিভিন্ন মতবাদে
বাংলাদেশের মুসলিম উম্মাহ যখন
নানাভাবে বিভক্ত তখন এই মানুষটিই
ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। খুঁটিনাটি
বিষয়কে প্রাধান্য না দিয়ে উম্মাহর
কঠিন সমস্যাগুলো নিয়ে মানুষটি
বেশি বেশি বলে গিয়েছেন, কাজ
করেছেন। মতবাদের বিষয় নিয়ে
মানুষকে দূরে ঠেলে না দিয়ে
কিভাবে কাছে টেনে বোঝাতে হয়
সেই উদাহরণ রেখে গিয়েছেন
আমাদের সামনে। দেশের যেকোনো
অঞ্চলে কাজ করার জন্য মানুষটি
ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। বিভিন্ন
জেলায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অহরহ ছুটে
বেড়িয়েছেন মানুষকে দ্বীন
ইসলামের সঠিক দাওয়াত পৌঁছে
দিতে।
সকাল থেকেই ওনার মৃত্যুর খবরটা বড়
বেশি কাঁদিয়েছে আমাকে। কিছুক্ষন
পরপরই ওনার কথা ভেবে চোখ ঝাপসা
হয়ে আসছিলো। সারাদিন আর
কোনো কাজেই মন বসাতে পারিনি।
১১টার দিকে কিছু ভাই এলেন শপে,
ওনাদের সাথেই কষ্টগুলো শেয়ার
করছিলাম আমরা। সবাই সবার নিজ
নিজ স্মৃতিচারণ করছিলেন ওনাকে
নিয়ে। কত প্ল্যানিং কত পড়াশুনা,
কত কিছু করার চিন্তা ছিল ওনাকে
নিয়ে। কত প্রজেক্টে উনি কাজ
করেছেন, কাজ করবেন বলে আশ্বাস
দিয়েছিলেন। কত খ্রিষ্টান
মিশনারিদের ষড়যন্ত্র ফাঁস করেছেন
উম্মাহর সামনে ইত্যাদি ইত্যাদি।
ওনার আচার-ব্যবহারে মুগ্ধ এক ভাই
বলছিলেন কিভাবে ওনারা
চাইছিলেন একটি মসজিদে বক্তব্য
রাখার জন্যে স্যার যাতে চট্টগ্রামে
আরেকটি দিন থেকেযান। আর তখনই
তিনি প্লেনের টিকেট ক্যান্সেল
করে দিলেন। শুধু অনুরোধ করলেন
ওনাকে যাতে পরদিন একটা ট্রেনের
টিকেটের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
মানুষটা যে পরিমান কাজ ও উদাহরণ
আমদের সামনে রেখে গেছেন তার
কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ হয়নি
আমাদের। আর আমাদের কৃতজ্ঞতার
প্রয়োজনই বা থাকবে কেন ওনার।
আল্লাহ্র দ্বীনের যে খেদমত তিনি
করে গেলেন সেটাই যথেষ্ট হবে ওনার
আখিরাতের জন্যে ইন শা আল্লাহ্।
তবুও ইচ্ছে হয় মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ওনার
সাথে দেখা হলে যদি দুটো কথা
বলতে পারতাম, যদি বলতে পারতাম,
স্যার আমাদের মত জাহেলদের জন্য
অনেক করেছেন আপনি। অনেক ধৈর্য
আর প্রজ্ঞার সাথে কাজ করেছেন
আপনি। আল্লাহ্ ইচ্ছে করেছেন এইবার
বিশ্রাম করবেন আপনি। নিজের
অর্জিত কাজের সাদকায়ে জা’রিয়া
উপভোগ করবেন। এখন আপনার
আনন্দের সময় স্যার । দয়াময় প্রভুর
কাছথেকে পুরষ্কার নেয়ার সময়।
আপনি সফল স্যার। ইনশাআল্লাহ্
আপনি সফল… লেখাটা লিখতে
লিখতে দুপুরে সেই ভাইয়ের কথাটা
বার বার মনে হচ্ছিলো। স্যার
চট্টগ্রামে অনেকবার এসেছেন
দাওয়াতি কাজে। ভাই যখন
শেষবারের দেখায় বলেছিলেন “স্যার
আমাদের জন্য দু’আ করবেন। আর স্যার
আমরা যদি ডাকি তাহলে কি আপনি
আসবেন চট্টগ্রামে?” সদা হাঁসি
লেগে থাকা মুখে স্যার বলেছিলেন –
“তোমরা আমাকে যখনই ডাকবে আমি
আসবো”…
– Amanah
আর কত প্রিয়জন হারানোর শোক
কী বিপদ যে আসন্ন আল্লাহই মালুম।
যেখানে যে নেককার ব্যক্তি আছেন,
জান্নাতের উদ্দেশে ইহলোক ত্যাগ
করছেন। প্রিয়তম উস্তায শহীদুল্লাহ
ফজলুল বারী রহিমাহুল্লাহকে
হারানোর শোক না শুকাতেই চলে
গেলেন প্রিয়তম ব্যক্তিত্ব শায়খ ড.
আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর। আজ এক
ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে উঠেছি।
সকালে নাস্তার পর ফেসবুকে ঢুকেই
স্তব্ধ হয়ে গেলাম। হৃদয় চুরমার হয়ে
গেছে। নিজের প্রিয় শিক্ষকদের
ছাড়া অন্য কারও মৃত্যুতে এমন গভীর
বেদনা অনুভব করিনি। কারও মৃত্যু-
সংবাদ এভাবে কাঁদায়নি। অথচ
তিনি আমার স্যার ছিলেন না,
শিক্ষকও ছিলেন না। সম্পর্কের দিক
থেকে আমি তাঁর আত্মীয় ছিলাম না,
অবস্থানের দিক থেকে কাছেরও
ছিলাম না। জীবনে একবারই কেবল
তাঁর সঙ্গে সরাসরি আলাপ-সাক্ষাৎ
হয়েছে। কিন্তু তিনি তাঁর ইলম
প্রচারের লিখন, শ্রবণ ও
দর্শনমাধ্যমের সুবাদে এত কাছের
একজন হয়ে গেছেন তা টের পেয়েছি
আজ হৃদয়ের ব্যথা আর চোখের পানি
থেকে। এ শুধু আমার অনুভূতি হলে কথা
ছিল, দেখছি সবার অনুভূতিই তথৈবচ।
তাঁকে দেখে শেখা উচিত, কেউ যদি
সত্যিকারার্থে আল্লাহকে
ভালোবাসেন আল্লাহও কিভাবে
সবার অন্তরে তার ভালোবাসা ঢেলে
দেন।
এ সময়ে অতি প্রয়োজনীয় কিছু দীনী
উদ্যোগের মধ্যমণি ছিলেন তিনি।
চারদিকে একে অপরের প্রতি কাদা
ছোড়াছুড়ি, একে অন্যের বিরুদ্ধে
ঘৃণার যে বিষবাষ্প ছড়াতে শুরু
করেছে, এর ইতি টানা এ মুহূর্তে এ
দেশে ইসলাম ও মুসলমানের জন্য
সবচেয়ে দরকারি কাজ। এ লক্ষ্যে
দারুর রাশাদের সাবেক উস্তায
সৌদি প্রবাসী বিশিষ্ট দাঈ শায়খ
আহমাদুল্লাহ ভাইয়ের উদ্যোগে যে
জরুরি উদ্যোগ চলছিল স্যারই ছিলেন
তার কেন্দ্র। খ্রিস্টান
মিশনারিগুলো ২০৫০ সালের মধ্যে
বাংলাদেশকে খ্রিস্টান সংখ্যাগুরু
রাষ্ট্রে পরিণত করার যে ভয়ঙ্কর
লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তাদের
বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক ও
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিনিই এগিয়ে
এসেছিলেন জীবন ও সম্পদের মোহ
উপেক্ষা করে।
আল্লাহর দীনের দাওয়াতের জন্য
একজন মানুষ কত বিনয়ী, কত নির্লোভ,
কত তৎপর, কত নিবেদিত হতে পারেন;
সর্বোপরি নানা মতের মুসলিমকে
যার যার ইতিবাচক দিকসহ কীভাবে
আপন করতে পারেন এবং তাঁদের আপন
হতে পারেন, তার এমন উজ্জ্বল
দৃষ্টান্ত এ মুহূর্তে আর দেখছি না।
তাঁর মুখের হাসিটিকে মনে হতো
মুখেরই অংশ যেন। ওই হাসি ছাড়া
কেউ কি তাঁকে দেখেনি। বিরুদ্ধমতের
তীব্র ঝাঁঝালো প্রশ্নে দিলখোলা
হাসিতে পর্যাপ্ত উদ্ধৃতি দিয়ে
অসম্ভব সাবলীল উত্তরে মন জয় করায়
এমন দক্ষ পণ্ডিত দ্বিতীয়টি দেখিনি।
– আলী হাসান তৈয়ব
Music Album Info :
![]()
Music Album:
Music Artist:
Music Size: 27.41 KB
Bitrate: